সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১১

বাস্তবতার নাটক এবং নাটকের বাস্তবতা - ফ্লোরা সরকার

অ্যারিস্টটলের ‘কাব্যতত্ত্ব’র সঙ্গে আমাদের পরিচিত হতে সুদীর্ঘ দু’হাজার বছর অপেক্ষা করতে হয়। ইংরেজের হাত ধরে তা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। বাংলায় গ্রিক সাহিত্যের সর্বপ্রথম রসজ্ঞ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনি ছাত্রাবস্থায় গ্রিক শিখেছিলেন এবং পরবর্তীতে ১৮৭১ সালে গ্রিক থেকে ইলিয়াদের কিছু অংশ অনুবাদ করেছিলেন বাংলায়। তার গ্রিকচর্চার একটিই ফল- ‘মেঘনাদবধকাব্য’। এর কাহিনী রামায়ণের, গঠন হোমারের। মাইকেলের পরে হয়তো স্বল্পসংখ্যক বাঙালি গ্রিকভাষা শিখেছিলেন, কিন্তু তাদের শিক্ষার কোনো ফল আমরা পাইনি। মাইকেল অ্যারিস্টটলের ‘কাব্যতত্ত্ব’র চতুর্বিংশ অধ্যায়ের প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন, তবে তার সমসাময়িককালে ক’জনের সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছিল জানা নেই। সেই অধ্যায়ের এক জায়গায় অ্যারিস্টটল নাটকে অবিশ্বাস্য সম্ভাব্যতার চেয়ে বিশ্বাসযোগ্য অসম্ভাব্যতার প্রতিই শুধু জোর দেননি, তিনি সেইসব নাটককেই কেবল গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, অব্যাখ্যেয় খুঁটিনাটি নিয়ে একটি কাহিনী গড়ে তোলা ঠিক নয়। যতটা সম্ভব অব্যাখ্যেয় বা অসম্ভাব্য ব্যাপার কাহিনীতে না থাকাই ভালো। তারপরের অধ্যায়ে, কাব্যের সমালোচনায় অ্যারিস্টটল আমাদের জানান- ‘চিত্রকর বা অন্যান্য শিল্পীর মতো কবিও জীবনের অনুকারক। কাজেই তাকে নিম্নের এই তিনটির যে কোনো একটি অনুকরণ করতে হবে, যেমন- (১) জীবন যেমন ছিল অথবা (২) জীবন যেমন আছে অথবা (৩) জীবন যেমন হওয়া উচিত।’ যে কারণে প্রাচীন গ্রিক নাট্যকারদের মধ্যে সোফোক্লেসকে আমরা দেখি, মানুষের জীবন যেমন হওয়া উচিত, তিনি সেভাবে মানুষের ছবি এঁকেছেন। নাট্যকার এউরিপিদেসকে আমরা দেখি মানুষ যেমন তেমন করেই তিনি মানুষের ছবি এঁকেছেন তার নাটকে। এই তিনটির যে কোনো একটি বৈশিষ্ট্য যদি কোনো নাটকে না দেখা যায় অ্যারিস্টটল বলেছেন, ‘কাহিনীটি এই রকমই’।
সেই সময়ের কবি ও দার্শনিক জেনোফোনেস ক্রুদ্ধ হয়ে এসব নাটকের কাহিনীকে সত্য থেকে দূরে থাকার উল্লেখসহ কাহিনীগুলোকে জনসম্মুখে আনার অযোগ্য বলে গণ্য করেন। বরং নাটকগুলোকে ‘প্রচলিত’ ধারার বলে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের বর্তমান টিভি চ্যানেলের নাটকগুলো জেনোফেনাস কথিত সেই প্রচলিত ধারার ধারাবাহিকতা মাত্র। এসব নাটক বাস্তবতা দূরে থাক নিজেরাই একটা বিকৃত বাস্তব নির্মাণ করে চলেছে, যার সঙ্গে জনগণের জীবনের কোনো সংযোগ নেই। এসব সংযোগহীন নাটক নিয়ে আলোচনার আগে মঞ্চ এবং টিভি নাটকের পার্থক্যটুকু আমাদের একটু ভেবে নেওয়া দরকার।
নাটককে বলা হয় দৃশ্যকাব্য। অর্থাৎ দৃষ্টির সম্মুখে প্রদর্শিত শিল্পমাধ্যম। নাটক মঞ্চ দিয়ে শুরু হলেও, পরবর্তীতে তার বিস্তার বিভিন্ন মাধ্যমে এগিয়ে যায়। টিভি নাটক যার মধ্যে অন্যতম একটি মাধ্যম। কিন্তু টিভি নাটক এবং মঞ্চ নাটকের ব্যবধান অনেক। কেননা, মঞ্চ একটি নির্দিষ্ট জায়গায়, কয়েকটি সেটের মধ্যে প্রদর্শিত হয়। আর টিভি নাটকের কোনো সুনির্দিষ্ট স্থান নেই। গল্পের প্রয়োজনে তা স্থান-কাল পরিবর্তিত হয়। মঞ্চনাটক সংলাপনির্ভর, টিভিনাটক স্বল্পসংলাপনির্ভর। টিভিনাটকে ফ্লাশব্যাক-ফ্ল্যাশইন যতটা স্বাচ্ছন্দ্য, মঞ্চে ততটা নয়। মঞ্চের সংলাপ অনেকটা যাত্রার ঢং-এ উচ্চারিত হলেও, টিভিনাটকের সংলাপে উচ্চস্বরের প্রয়োজন পড়ে না। মঞ্চে শিল্পীর অভিব্যক্তি যতটা তীব্রতার প্রয়োজন পড়ে, টিভিনাটকে ততটা প্রয়োজন পড়ে না। কারণ মঞ্চে দর্শক এবং শিল্পীর দূরত্ব যতটা তার চাইতে টিভিনাটকের ক্যামেরা ততটাই কাছাকাছি। মঞ্চনাটকে মঞ্চে একসঙ্গে অনেক শিল্পীর সমাগম ঘটে, কদাচিৎ একক শিল্পীকে মঞ্চে দেখা যায়, টিভিনাটকে কমসংখ্যক শিল্পীর সমাগমই অধিক। এরকম আরো পার্থক্য দেখানো যেতে পারে।
কিন্তু টিভিনাটকের ক্ষেত্রে যে সমস্যাটা হয় তা হলো টিভিনাটক কিছুটা মঞ্চ, কিছুটা সিনেমার মাঝামাঝি। মঞ্চ এবং সিনেমার মাঝে পড়ে টিভিনাটকের আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য আমরা আজ পর্যন্ত খুঁজে দেখিনি বা চিন্তাভাবনা করিনি। তবে মঞ্চ বা টিভিনাটকের মাঝে পার্থক্য যা-ই থাক, গল্প বা কাহিনী বর্ণনার কিছু মূল ব্যাকরণ থাকে, যেসব ব্যাকরণ স্থান-কাল নিরপেক্ষ। ব্যাকরণের কোনো পরিবর্তন যেমন হয় না তেমনি মঞ্চনাটক, টিভিনাটক বা সিনেমার ব্যাকরণ কখনো পরিবর্তিত হয় না। অর্থাৎ পথ ভিন্ন হলেও গন্তব্য একই জায়গায় থাকে। সেটা অ্যারিস্টটল কথিত, জীবন যেমন ছিল বা জীবন যেমন বা যেমন হওয়া উচিত, তার যে কোনো একটা হতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো আমাদের টিভিনাটকে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য দূরে থাক, সেসব নাটকে আমরা কী আদৌ কোনো জীবন দেখতে পাই?
টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রতিদিন অসংখ্য নাটক প্রচারিত হয়। এসব নাটক নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে বিভিন্নভাবে উষ্মা প্রকাশ করতেও দেখা গেছে। অনেকে আজকাল টিভি দেখা একরকম ছেড়েই দিয়েছেন। খবরটুকু ছাড়া আর কোনো বিনোদন দর্শকরা টিভি চ্যানেলগুলোতে খুঁজে পান কিনা সন্দেহ। কিন্তু বিশেষ নাটকগুলোও যখন যেনতেনভাবে টিভিতে প্রচারিত হতে দেখা যায় তখন বিষয়টা অত্যন্ত দুঃখজনক হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবছর প্রচুর ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ঈদের লম্বা ছুটিতে লম্বা দিনের, কোনোটা ছয়দিন, কোনোটা সাতদিন, কোনোটা আবার আটদিনের আয়োজনে প্রচুর বিশেষ নাটক প্রদর্শিত হয়। হাতেগোনা কয়েকটা নাটক ছাড়া সেই সময়টাতে টিভির সামনে বসে থাকাই একটা যন্ত্রণাদায়ক হয়ে দাঁড়ায়। এখন এবারের ঈদের সেসব তথাকথিত বিশেষ নাটকের কয়েকটা বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।
প্রেম-রোগ থেকে টিভিনাটকের কোনো নিস্তার নেই। নিস্তার নেই সিরিয়াল রচনা থেকেও। প্রেমের নাটকের ভাইরাসের মতো আমাদের সিরিয়াল নাটকগুলোও একই রকম ভাইরাসে আক্রান্ত। সারাবছর সিরিয়ালের প্রদর্শনের পাশাপাশি ঈদের বিশেষ নাটকগুলোতেও এই সিরিয়াল নামক ভাইরাস তার বিস্তার ঘটিয়েছে। ‘প্রেমের নাম বেদনা’ নামের নাটকটি গত ঈদে দুই পর্বে প্রচারিত হয়। প্রথম পর্বে দেখা যায়, অভিনয় করতে এসে নায়িকা একটি সমস্যার মুখোমুখি হয়। সমস্যাটি কী? না কোনো আর্থিক বা সামাজিক সমস্যা নয়, সমস্যা একটাই আর তা হলো পরিচালক তার প্রেমে পড়েন এবং নায়িকা সেই প্রেমে সাড়া দিতে পারেন না। ফলে তার অভিনয় জগতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া হয় না। অর্থাৎ দর্শককে এটাই বোঝানো হয় যে- নাটকে প্রতিষ্ঠা পেতে হলে পরিচালকদের প্রেমে পড়তে হবে। নাটকের আরেকজন নায়িকাও অভিনয় করতে আসেন এবং পরিচালক তারও প্রেমে পড়েন, নায়িকা সাড়া দেন এবং তাদের যথারীতি বিয়ে হয়ে যায়। অর্থাৎ একই মানুষ একই সময়ে দুজনের প্রেমে পড়তে পারেন।
এবারের ঈদে সেই নাটকের সেই সিরিয়ালে দেখা যাবে, প্রথম নায়িকা এবার পরিচালকের প্রেমে পড়েছেন। কিন্তু অপর নায়িকা তার স্বামীকে (সেই পরিচালক) ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব বিকৃত বাস্তবতার উপস্থাপন দিয়ে দর্শককে আদৌ কোনো আনন্দ প্রদান করা যায় কিনা তা ভেবে দেখা দরকার।
এবারের ঈদের আরেকটি নাটক ‘হাতে মাত্র পাঁচদিন’ নাটকে দেখা যাবে ছবি তোলার নেশায় নায়ক ঢাকা থেকে কক্সবাজার ছুটে যায়। সেখানে যথারীতি নায়িকার সঙ্গে পরিচয় হয়। কিন্তু নায়িকার জীবনে একটা অতীত আছে, নায়ক-নায়িকার সেই অতীত থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য তার কাছে পাঁচদিন সময় চায়। মজার বিষয় হলো, বাস্তবে কেউ দ্রুত প্রেমে না পড়লেও আমাদের নাটকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নায়ক-নায়িকারা প্রেমে পড়ে যান। কারণ ‘প্রেম’ নামক বিষয়টিকে যেভাবেই হোক নাটকে আনা চাই। ‘ভালোবাসার রং’ নাটকে দেখা যাবে, নায়ক আমেরিকা থেকে ফিরছে। তাকে রিসিভ করতে যাওয়ার সময় নায়িকা জানতে পারে নায়ক বিমান দুর্ঘনায় মারা গেছে। নায়িকা সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। একসময় সে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলে নায়িকা। তাকে সুস্থ করার জন্য আরেকজন নায়ক যিনি আবার পেশায় ডাক্তার তিনি ছুটে আসেন। নায়িকা সুস্থ হতে থাকে এবং যথারীতি সেই ডাক্তারের প্রেমে পড়ে। তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিয়ের আসরে হিন্দি ছবির ঢং-এ প্রথম নায়ক এসে উপস্থিত হয়। এধরনের উদ্ভট গল্প সাজিয়ে পরিচালকই বা দর্শকদের কী বোঝাতে চান আর দর্শকই বা কী বুঝে কতটুকু বিনোদন পান তার সঠিক পরিমাপ আমাদের জানা নেই।
ত্রিভুজ প্রেমে ইদানীং সম্ভবত সবার ক্লান্তি এসে গেছে। তবু এবারের ঈদে ‘শুকতারা’ নাটকে তিন তারা (নোবেল, তারিন, মিলন) বেষ্টিত ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী আমরা দেখতে পাব। আরেকটি ঈদের নাটকে নায়ককে দেখা যাবে ধনী নায়িকার বাড়ির প্রহরীর চরিত্রে। গল্পের বাকিটা জানা থাকলেও আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না, সেই প্রহরী নায়কের সঙ্গে ধনী নায়িকার অবশ্যই প্রেম সম্পন্ন হবে। সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ নেই, ঈদের প্রায় প্রতিটি নাটকের কাহিনী কম-বেশি একই ছাঁচে গড়ে তোলা হয় প্রতি বছর। যেসব নাটকের বাস্তবতা জীবনের বাস্তবতা থেকে থাকে শতহস্ত দূরে। সাধারণ মানুষের একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে আর তা হলো ইন্দ্রিয় দ্বারা সে যা দেখে বা বোঝে তাকেই সে চরম বলে ভেবে বসে। আর এই সুযোগটাই আমাদের নির্মাতারা গ্রহণ করেন। ইচ্ছেমত মনগড়া বিকৃত সব কাহিনী সাজিয়ে উপস্থাপন করেন টিভি দর্শকদের সামনে। মানুষ তার জীবনে যা করে বা যা বলে তার চেয়ে বেশি সে ভাবে। জীবন যেমন বা যেমন হওয়া উচিত যেভাবেই আমরা জীবনকে নাটকে উপস্থাপন করি না কেন, শুধু সংলাপের পর সংলাপ সাজালেই তার উপস্থাপন সঠিক হয় না, জীবনের না-বলার একটা বৃহৎ অংশ থাকে, যার উপস্থাপন খুব সহজকর্ম নয়। আর তাই ‘ভাবি কেমন আছেন’ বা ‘ইস্! মাইয়াডা তো খুব সুন্দর’ জাতীয় কথামালার কথা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয় আমাদের তথাকথিত টিভিনাটকগুলো।
যা পাঠযোগ্য তা দর্শনযোগ্যও বটে। যে জন্য আজও আমরা ইবসেন, ব্রেখট, শেক্সপিয়ার পাঠ করি। আমাদের টিভিনাটকের পান্ডুলিপি (অনেক নির্মাতার আবার সেই বস্ত্তটিও হাতের কাছে থাকে না। তারা এতটাই অাঁতেল যে পান্ডুলিপির প্রয়োজনই পড়ে না) পাঠযোগ্য হয় না বলেই তা দর্শনযোগ্য হতে পারে না। গ্ল্যামারাস নায়ক-নায়িকা, গ্ল্যামারাস পোশাক, গ্ল্যামারাস আসবাব, বাড়িঘর, আউটডোর সাজিয়ে দর্শকের চোখের দৃষ্টিকে শান্ত করা গেলেও মনের দৃষ্টিটা অশান্তই থেকে যায়। কারণ অন্তঃসারশূন্য কাহিনী দিয়ে আর যাই নির্মাণ করা যাক তা দিয়ে কখনোই ভালো নাটক নির্মাণ করা যায় না। অনেক নির্মাতা এবং দর্শককে আজকাল বলতে শোনা যায়- নাটকে এত সিরিয়াস কিছু দেখাবার দরকারটাই বা কী? বিনোদন থাকবে বিনোদনের জায়গায়। আমরাও এর সঙ্গে একমত। কিন্তু বিনোদনের নামে যখন প্রহসন করা হয় তখন বিষয়টা ভাবিয়ে তোলে বৈকি। ঈদের মোড়কে পোশাকের দোকানিরা যেমন সারা বছরের বাণিজ্য করে নেন এই সময়ে,  নাটকের নির্মাতারাও বছরের এই সময়টায় একই উদ্দেশ্যে বসে থাকেন। এতে হয় তো বাণিজ্য হতে পারে খুব ভালো, কিন্তু নাটক নির্মিত হয় না। নাটক শুধু পান্ডুলিপিনির্ভর কোনো শিল্পমাধ্যম নয়, তার সঙ্গে জড়িত থাকে সংলাপ, অভিনয়, শব্দগ্রহণ, আবহসঙ্গীত, সম্পাদনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ। স্থানাভাবে আজ এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো না। পরবর্তী কোনো একসময়ে তা করা যাবে।
নাটক নামক শিল্পকর্মটি যে খুব সহজ কাজ নয় তা বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, নাট্যকার দিদেরো তার একটি কথা দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন- ‘যিনি নাটক লিখবেন তাকে অবশ্যই প্রথমত একজন দার্শনিক হতে হবে, যিনি তার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে নিজেকে এবং অপরকে দেখতে পাবেন, তাকে অবশ্যই মনুষ্য চরিত্র সম্বন্ধে খুব ভালোমতো অবগত থাকতে হবে, সে তার সামাজিক পরিবেশের ছাত্র এবং সেই সমাজের কার্যাদি, গুরুত্ব, সমাজের সুবিধা-অসুবিধার দিকগুলো অবগাহন করতে হবে। কোনো শিশুচিত্ত নাট্যকারের পক্ষে সমস্যামূলক নাটক লেখা সম্ভব নয়, কারণ সমস্যামূলক নাটকে প্রয়োজন হয় নান্দনিকতা, গভীর জ্ঞান, আভিজাত্যবোধ এবং বুদ্ধিমত্তার শক্তি। অন্তর্লোক এবং বহির্লোকের (মানুষ+চরিত্র+সমাজ+ব্যবস্থা) পরিপাটি জ্ঞান যার নেই তার পক্ষে মহৎ কিছু সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।’ এসবই হচ্ছে নাটকের সেই ব্যাকরণ, যা কখনো পুরনো হয় না, বাণী চিরন্তনের মতো বেঁচে থাকে। আশা করব আমাদের বর্তমান নির্মাতারা কিছুটা হলেও তাদের জ্ঞানের ভান্ডারের চর্চা করবেন এবং আমাদের পতিত নাটকগুলো থেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করবেন। তখন আমরা নাটকের বিকৃত এসব বাস্তবতা নয়, বাস্তবতার প্রতিফলন, জীবনের প্রতিফলন নাটকে দেখতে পাব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন